হাদীসের যথার্থতা বিচারের নিয়ম - হাদীস সংগ্রহ

হাদীসের যথার্থতা বিচারের নিয়ম এবং হাদীস সংগ্রহ সম্পর্কে যদি আপনি জানতে চান তাহলে সঠিক জায়গায় এসেছেন। নিজে আমরা ভালোভাবে আলোচনা করেছি এবং সকল পয়েন্ট উল্লেখ করেছি হাদীসের যথার্থ বিচারের নিয়ম সম্পর্কে। আপনি যদি হাদীসের যথার্থ বিচারের নিয়ম সম্পর্কে না জেনে থাকেন তাহলে এটি আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে।
বুখারী
আপনি যদি একজন মুসলিম হয়ে থাকেন তাহলে হাদীসের যথার্থতা বিচারের নিয়ম আপনার জেনে রাখা প্রয়োজন। এটি মুসলিমদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সূচিপত্র

ভূমিকা - হাদীসের যথার্থতা বিচারের নিয়ম

ইসলাম ধর্মের মধ্যে দুটি মূল ভিত্তি হল কুরআন ও হাদীস। ইসলামী জীবন ব্যবস্থার ক্ষেত্রে কুরআনের পরেই হাদীসের স্থান। সুতরাং হাদীসের গুরুত্ব অপরিসীম। আর মূলত আমরা হাদীসকে তিন শ্রেণীর পেয়ে থাকি প্রথম হলো হাদীস-এ-কাওলী- কোন প্রশ্নের উত্তর বা কুরআনের ব্যাখ্যা হিসেবে মহান অভির বাণী।

দ্বিতীয়টি হল হাদীস-এ-ফেলী-আচার-অনুষ্ঠানে বা দৈনন্দিন জীবনে মহানবীর কর্ম ও অনুশীলন; তৃতীয় হল হাদীস-এ-তাকরিরী-অন্যোর কর্ম ও অনুশীলনে মহানবীর মৌন অনুমোদন। তো চলুন এখন বেশি দেরি না করে আমি আপনাদের সামনে হাদীসের যথার্থতা বিচারের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরি।

হাদীসের যথার্থতা বিচারের নিয়ম

হাদীসের যথার্থতা বিচারের নিয়ম
স্বার্থান্বেষী মহল যখন নিজেদের সুবিধার্থে বহু মিথ্যা হাদীস প্রচার করা শুরু করে, তখন এর হাত থেকে মু্ক্ত হওয়ার জন্য হাদীসবেত্তার (মুহাদ্দিসিন) খুবই সর্তকতার সঙ্গে হাদীসের যথার্থতা, অর্থাৎ নির্ভরযোগ্যতা ও বিশ্বস্ততা যাচাই করে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে হাদীস সংগ্রাহ ও সঙ্কলনের কাজ নিয়োজিত হন।


তাঁরা হাদীসের বিষয়বস্তু (মতন) ও হাদীস বর্ণনাকারীর বর্ণনা (ইসনাদ) ভালোভাবে যাচাই করে দেখেন। ’আদ-দিরায়াত’ হাদীসের বিষয়বস্তর যৌক্তিকতা এবং ’আর-রিওয়ায়াত’ হাদীসের বর্ণনাকািরীর বর্ণনার যৌক্তিকতা নিরূপণে সম্পৃক্ত। হাদীসের নির্ভরযোগ্যতা ও বিশ্বস্ততা যাচাইয়ের জন্য শাহ্ আবদুল আজিজ কর্তৃক উদ্ভাবিত পন্থা মতে নিম্নবর্ণিত অবস্থাতে কোন হাদীসই গ্রহনযোগ্য নয় এবং এই অবস্থানসমূহ হচ্ছে:

১. যদি এটা যুক্তি অথবা ইসলামের সরল শিক্ষণের বিরুদ্ধ হয়।

২. যদি এটা নির্দিষ্ট ঐতিহাসিক ঘটনার বিপরীত হয়।

৩. এটা যদি সামান্যতম পাপের জন্য কঠোর শাস্তি এবং সামান্যতম পূণ্যের জন্য অফুরন্ত পুরস্কারের কথা বলে।

৪. যদি এটি ভালো কাজ সম্পূর্ণ কাজের পুরস্কারের ক্ষেত্রে পয়গম্বর রাসূলদের পুরস্কার দেওয়ার কথা বলা হয়।

৫. যদি এটা কেবল একক ব্যক্তির দ্বারা নির্দেশিত হয় যে, এটাকে জানা বরং এটার উপর কাজ করা সকলের জন্য বাধ্যবাধকতাপৃর্ণ, এই ধরনের উক্তি হয়।

৬. যদি কেবল একজন লোকের দ্বারা কোন ঘটনা ঘটার বিবরণ দেওয়া হয়, অথচ তা ঘটলে অধিকাংশ লোকই অবগত হতো, এমন কোন ঘটনা।

৭. যদি হাদীসের বিষয়বস্তু নির্ভরযোগ্য ও অবিশ্বাসযোগ্য হয়, অর্থাৎ হাদীসে বর্ণিত বাক্য আরবি বাক্যের রীতি বিরোধী, অথবা তা মহানবীর পক্ষে অশোভন বলে বিবেচিত হয়।

৮. যদি বর্ণনাকারী শি’আ অথবা খারিজী সম্প্রদায়ের হয় এবং তার সম্প্রদায়ের সমর্থনে ও তার প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে কোন হাদীস বর্ণিত হয়।

৯. হাদীস বন্যার সময় ও পরিস্থিতি সম্পর্কে জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া যায়।

১০. যদি বর্ণনাকারী স্বীকার করে যে, সে বর্ণনার সময় জালিয়াতের আশ্রয় নিয়েছে, ইত্যাদি।

হাদীস সংগ্রহ

হাদীস সংগ্রহ
মহানবীর জীবদ্দশায় সাধারণত সমুদয় হাদীস লিপিবদ্ধ হয় নাই। তবে মহানবীর পরিবারের লোকজন এবং সাহাবারা মহানবীর বাণী বা উপদেশ বলি স্মৃতিতে সংরক্ষণ করতেন। আবার, মহানবীর অনেক সাহাবা তাদের ব্যক্তিগত জীবন প্রয়োগের জন্য অনেক সময় হাদীস লিখে রাখতেন। আর তাই দেখা যায়, প্রথম দিকে হাদীস ব্যক্তিগত পর্যায়ে সংরক্ষিত হতো।

পরবর্তীতে মহানবী তার উপদেশ বলি অপরদেরকে জ্ঞাত করানোর উদ্দেশ্যে হাদীস প্রচারের ব্যাপারে যারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন হযরত আয়েশা, হযরত হাফসা, হযরত যয়নব, হযরত ওমর, হযরত উসমান, হযরত আলী, আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস, মুয়াজ ইবন জাবল, আবু মূসা আশ‘আরী ও ওমর ইবন আল-‘আস।


মুসলিম সাম্রাজ্যের বিস্তৃতির সঙ্গে সঙ্গে মহানবীর সহাবারা বিভিন্ন অঞ্চলের ছড়িয়ে পড়েন এবং তাদেরকে কেন্দ্র করে হাদীসের বিভিন্ন শিক্ষা কেন্দ্র গড়ে ওঠে। এই হাদীস শিক্ষা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মদিনা, মক্কা,বসরা এবং কুফা। সে সময় পর্যন্ত অধিকাংশ হাদীস সাহাবাদের স্মৃতিতে সংরক্ষিত ছিলো।

হিজরী প্রথম শতাব্দীর শেষের দিকে লিখিতভাবে হাদীস সংগ্রহের ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন, তিনি হচ্ছেন ইমাম যুহরী। খলিফা দ্বিতীয় ওমর লিখিত আকারে হাদীস সংগ্রহ ও সংকলনের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট আদেশ দেন। তবে তাদের হাদীস সংগ্রহ ও সংকলন আমাদের হাতে পড়ে নাই।

হিজরীর দ্বিতীয় শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় অনেক হদীস সংগ্রহ ও সংকলনের কাজে নিয়োজিত হন। আর তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন ইবন যুরাইজ ও সাদা ইবন আবি ‘আরুবাহ্। এর কিছুকাল পরেই আমরা পাই ইমাম মালিকের ‘মুয়াত্তা’। কিন্তু তাদের কাজ তেমন পুঙ্খানুপুঙ্খ ছিল না, কেননা সেগুলো আঞ্চলিক কেন্দ্রের উপর নির্ভর করে সংগ্রহ ও সংকলন করা হয়েছিল।

ইত্যকমরে স্বার্থেন্বেষী মহলের লোকেরা নিজেদের তৈরি মিথ্যা হাদীস প্রচার করা শুরু করে। আর এতে করে যথার্থ হাদীস সংগ্রহের জাকে নানা অনুবিধার সৃষ্টি হতে থাকে। এতদসত্বেও হিজরী তৃতীয় শতাব্দীতে কতিপয় কঠোর পরিশ্রমী ও উৎসাহী ব্যক্তি হাদীস সংগ্রহের কাজে এগিয়ে যায়। এ পর্যায়ে হাদীস সংগ্রহ দু‘রকমের হয় :

১. মুসনাদ।

২. জামী বা মুসান্নাফা।

মুসনাদ নাদে অভিহিত হাদীস সংগ্রহ ও সঙ্কলন হাদীসের বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি না করে হাদীস বর্ণনাকারীর নামের উপর ভিত্তি করে করা হতো। জামী নামে অভিহিত হাদীস সংগ্রহ ও সংকলন কেবল বিষয়বস্তুর উপর নির্ভর করে নয়, বরং আরো অধিক বিচারমূলক দৃষ্টিভঙ্গিতে কর ‘সিহাহ্ সিত্তা’ নামে হাদীসের ছয়টি প্রামাণ্য গ্রন্থ সংগ্রহ ও সঙ্কলনের কাজ সমাপ্ত হয়। আর এগুলো সংগ্রহ ও সঙ্কলনকরী হলেন ইমাম বুখারী, ইমাম মুসলিম, ইমাম আবু দাউদ, ইমাম তিরমিজী, ইমাম ইবন মাজাহ আবেং ইমাম আন-নাসাঈ।

বুখারী

ইমাম বুখারী পুরো নাম মুহাম্মদ ইবন ইসমাঈ বুখারী। তিনি বুখারায় ১৯৮ হিজরী/ ৮১০ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহন করেন এবং সমরখান্দের নিকটবর্তী কারতাঙ্গা গ্রামে ৮৭০ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি বুখারার অধিকাসী ছিলেন বলে বুখারী নামে পরিচিত। তাঁর সংগৃহীত সঙ্কলন হাদীসসমূহের নামে ‘সাহীহ বুখারী’। তিনি এগারো বছর বয়সে হাদীস অধ্যায়ন শুরু করেন।

তিনি সতর্কতা ও ধৈর্যের সঙ্গে হাদীস যাচাই করে তা সংগ্রহ করতেন। কথিত আছে যে, তিনি ষোল বৎসর ধরে কঠোর পরিশ্রম করে ছয় লক্ষ হাদীস বাছাই করে। তিনি হাদীসের যথার্থতা, হঠাৎ নির্ভরযোগ্যতা ও বিশ্বস্ততা যাচাই করতে আল্লাহর সাহায্য কামনা করতেন। তিনি হাদীস হস্তান্তকারী বর্ণনাকারীদের বিশ্বস্ততা যাচাই না করে কোন হাদীস সংগ্রহ করতেন না। তিনি হাদীস সংগ্রহ ও সঙ্কলনের ব্যাপারে পবিত্র কুরআনের সাহায্য নেন এবং এটা দেখান যে, হাদীস শারীফ পবিত্র কুরআনের ভাষ্য, ব্যাখ্যা ও টিকা বিশেষ। তাঁর সঙ্কললিত হদীসের গ্রন্থ ‘সাহীহ’ সর্বাধিক প্রমাণ্য বলে মনে করা হয়।

মুসলিম

ইমাম মুসলিমের পুরো নাম মুসলিম বিন আল হাজ্জাজ। তিনি পূর্ব ইরানের নিশাপুরে ২০৪ হিজরী/৮২৬ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহন করেন এবং ২৬১ হিজরী/৮৮৩ খ্রিস্টব্দে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর সংগৃহিত ও সঙ্কলিত হাদীসসমূহের নাম ‘আস-সাহীহ-ইল-মুসলিম’। এর মধ্যে তিনি হাজার হাদীস আছে। এই হাদীসসমূহ বিশেষভাবে ইসনাদের উপর গুরুত্ব আরোপ করে। নির্ভরযোগ্যতা ও বিশ্বস্ততার দিক থেকে ‘সাহীহ বুখারী’- র পরেই ‘সাহীহ-উল-মুসলিম’- আরে স্থান বলে মনে করা হয়।

উপসংহার

আপনি যদি একজন মুসলীম হয়ে থাকেন তহলে আপনার অবশ্যয় জানা প্রয়োজন হাদীসেরর যথার্থতা বিচারের নিয়ম। আপনি যদি এই আর্টিকেলটি ভালো করে পড়ে থাকেন তাহলে আপনি হয়তো হাদীসের অনেক তথ্যই জানতে পেরেছেন।

তবে আপনি যদি আরও বেশি কিছু জেনে থাকেন তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানিয়ে রাখবেন এতে করে অন্যরা সেটি দেখে উপকৃত হবে। নিজের ফেসবুক আইকনিক ক্লিক করে এই আর্টিকেলটি আপনার ফেসবুকে শেয়ার করে রাখুন। এতে করে অন্যাও এই হাদীসের যথার্থতা বিচারের নিয়ম সম্পর্কে এবং হাদীস সংগ্রহের বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ইভিভিটিভি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়;

comment url