চলিত ভাষা কাকে বলে এর বৈশিষ্ট্য - আঞ্চলিক ভাষা বলতে কী বোঝো


আঞ্চলিক ভাষা বলতে কী বোঝো এবং চলিত ভাষা কাকে বলে এর বৈশিষ্ট্য গুলো কি এগুলো প্রায়ই সমস্ত ক্লাসের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য প্রয়োজন। কারণ এই বিষয়গুলো সমস্ত ক্লাসেই আলোচনা হয়। এছাড়াও এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এগুলো বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় কাজে আসে। আপনারা যারা চলিত ভাষা কাকে বলে এর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতে চান তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেলটি তৈরি করা হয়েছে।
চলিত-ভাষা-কাকে-বলে-এর-বৈশিষ্ট্য
চলিত ভাষা কি বা চলিত ভাষা কাকে বলে এর বৈশিষ্ট্য জানার আগে অবশ্যই আপনাকে জানতে হবে ভাষা কি ভাষা সম্পর্কে আমরা ধাপে ধাপে নিজে এই বিষয়ে আলোচনা করছি।
ইভিভিটিভি

ভাষা কি?

মানব সভ্যতার বহুবচন পূর্ব থেকে মানুষ তার অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে মনের ভাব প্রকাশ করতো। কিন্তু কালের যাত্রায় এখন আর অঙ্গভঙ্গির খুব একটা প্রয়োজন পড়ে না। এখন মনের ভাব প্রকাশে কণ্ঠথলি বা বাকশক্তির ব্যবহারকেই শ্রেষ্ঠ মনে করা হয়ে থাকে। উল্লেখ্য, কন্ঠ ধরে সাহায্যে মানুষ তার মনোভাবকে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্মরূপে প্রকাশ করতে সমর্থ হয়। এই “কন্ঠধ্বনি’ বা ‘বাগযন্ত্র’ নামক অঙ্গের দ্বারা উচ্চারিত সকল অর্থবোধক শব্দকে ভাষা বলে।


ভাষা কী : বাকযন্ত্রের দ্বারা উচ্চারিত অর্থবোধক ধোনির সহায়তায় মানুষের ভাব প্রকাশের মাধ্যমকে ভাষা বলা হয়। আরো পরিষ্কার করে বলা যায় মানুষ তার মনোভাব প্রকাশের যেভাবে অর্থবোধক ধনী বা শব্দের উচ্চারণ ঘটায় তাকে ‘ভাষা’ বলে।

বাংলা ভাষার রীতি কয়টি ও কি কি?

আমরা জানলাম ভাষা কি? এখন যেহেতু আমরা চলিত ভাষা সম্পর্কে আলোচনা করব। এটি জানার আগে আমাদেরকে বাংলা ভাষার রীতি কয়টি ও কি কি? এই বিষয় জানতে হবে। নিচে ভাষার প্রকারভেদ তুলে ধরা হলো।

ভাষার প্রকার: ভাষা ভাবের বাহন। পৃথিবীর সকল মানুষের ভাষায় বাক যন্ত্রের দ্বারা সৃষ্ট। তবুও দেখা যায়, একই ধনী বা ধ্বনিসমষ্টির অর্থ বিভিন্ন মানব গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন রকমের। আর এই কারণেই বিভিন্ন মানব গোষ্ঠীর জন্য সৃষ্টি হয়েছে আলাদা আলাদা ভাষার। স্থান কাল পরিবেশভেদে ভাষার পার্থক্য ও পরিবর্তন ঘটে।

পৃথিবীর প্রায় ৩০ কোটি মানুষের মুখের ভাষা বাংলা। এই বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চলের মানুষের মুখের ভাষাকে প্রধানত দুটি রীতিতে বিভক্ত করা হয়ে থাকে। যথা:

ক. সাধু ভাষারীতি
থ. চলিত ভাষারীতি।

ক. সাধুরীতি: সর্বনাম ও ক্রিয়াপদ প্রলম্বিত ও তৎসম শব্দ বহুল অত্যাধিক ব্যাকরণ অনুসারী মার্জিত সাহিত্যিক ভাষাকে সাদরীতি ভাষা বলে।

খ. চলিতরীতি: সর্বনাম ও ক্রিয়াপদ সংক্ষিপ্ত এবং তৎসম শব্দ বর্জিত মার্জিত কথ্য ভাষাকে চলিত ভাষা বলে। যেমন - স তোমাকে না দেখে কত যে যতনা ভোগ করছি তা তুমি একবারও ভাবছো না।

চলিত ভাষা কাকে বলে এর বৈশিষ্ট্য


চলিত-ভাষা-কাকে-বলে-এর-বৈশিষ্ট্য
তৎসম শব্দ বর্জিত, ক্রিয়াপদ ও সর্বনাম পদের ব্যবহারকে চলিত ভাষা বলে। নিম্নে এ ভাষার বৈশিষ্ট্য সমূহ বর্ণনা করা হলো।

চলিত ভাষার বৈশিষ্ট্যসমূহ:

  • চলিতরীতিতে তদ্ভব ও দেশি শব্দের ব্যবহার বেশি। দৃষ্টান্ত: বন, চাঁদ, কুল, ধামা ইত্যাদি।
  • চলিত ভাষারীতিতে সর্বনাম পদে সংক্ষিপ্তকারে ব্যবহৃত হয়। যেমন- তার, যার, এই ইত্যাদি।
  • চলিত ভাষারীতিতে ক্রিয়াপদ সংক্ষিপ্তরূপে ব্যবহৃত হয়। যেমন-করছি, বলছি, করেছিলো, করব ইত্যাদি।
  • চলিতরীতি পরিবর্তনশীল। একশ বছর আগে যে চলিতরীতি সেই যুগের শিষ্ট ও ভদ্রজনের কথিত ভাষা বা মুখের বুলি হিসেবে প্রচলিত ছিল, সময়ান্তে তা বহুলাংশে পরিবর্তিত রূপ লাভ করেছে।
  • চলিতরীতি সংক্ষিপ্ত ও সহজবোধ্য।
  • নাট্যসংলাপ, বক্তৃতা ও আলাপ আলোচনার উপযোগী ভাষারীতির নাম চলিতরীতি।
  • চলিত ভাষরীতি সুনিদিষ্ট কোন নিয়মকে অনুসরণ করে না। বরং অঞ্চলভেদে তা সদা পরিবর্তনযোগ্য।
  • চলিত ভাষায় স্বরসঙ্গতি ও অভিশ্রুতিজনিত স্বরধ্বনির পরিবর্তন অধিক। যেমন- স্বরসঙ্গতি: বিলেতি > বিলিত, মুলা > মুলো, চূড়া >। অভিশ্রুতিঃ শুনিয়া > শুনে , বলিয়া > বলে , মাছুয়া > মেছো ইত্যাদি।
  • ভাষাগত সরলতা বিধানে চলিত রীকিকে সন্ধি ও সমাসকে ভেঙে সজীকরণ করা হয়। যেমন- কুয়াশা, খোঁজ করা , চরিত্রবান প্রভৃতি।

পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলা ভাষার দুটি রীতি থাকলেও বর্তমানে সাহিত্য রচনায় চলিত রীতিকে প্রধান্য দেয় হয়ে থাকে। চলিত ভাষা জনসাধারণের মুখের ভাষা এবং অধিকতর সহজবোধ হওয়ায় আধুনিক ও উত্তর আধুনিক যুগে এ ভাষারীতি মোটামুটি একটা মানদন্ডে উপনীত হয়ে পেরেছে; কিন্তু পূর্বেকার সাধু রীতির রচনাবলিকে কেউ অবহেলা করতে পারে না।

সাধুভাষা থেকে চলিত ভাষায় রুপান্তর

সাধুরীতি : সংসারে অবুঝকে বুঝইতে যাওয়ার তুল্য বিরক্তিকর আর কিছু নাই। বয়স্ক অবুঝ শিশুর চেয়ে অনেক বিপত্তিকর। শিশু চাঁদ চাহিলে তাহাকে চাঁদের পরিবর্তে মিষ্টানন্ন দিলে সে শান্ত হয়, তাহা না হইলে প্রহার করিলে সে কাঁদিতে কাঁদিতে ঘুমাইয়া পড়িয়া শান্ত হয়। কিন্তু বয়স্ক অবুঝ কিছুতেই ভুঝিতে চাহে না।

চলিতরীতি: সাংসারে অবুঝকে ভুঝতে যাওয়ার মতো জ্বালাকনের আর কিছু নেই। বুড়া রোক অবুঝ শিশুর চেয়ে অনেক বিপজ্জনক। শিশু চাঁদ চাইলে তাকে চাঁদের পরিবর্তে মিঠাই দিলে সেই শান্ত হয়, না হলে মার দিলে সে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ে শান্ত হয়। কিন্তু বুড়ো অবুঝ কিছুতেই বুঝতে চায় না।

চলিত ভাষারীতি থেকে সাধু ভাষরীতি রুপান্তর

চলিতভাষরীতি: ফুটপাতে ওরা সব এলিয়ে পড়ে রয়েছে। ছড়ানো খড় যেন। কিন্ত দুপুরের দিকে লঙ্গরখানায় দুটি খেতে পেযেছিলো বলে তাদের ঘুম এসেছে মৃত্যুর মত নিঃসাড় নিশ্চল ঘুম। তবে আমুর চোখে ঘুম নেই, শুধুনা কখনো কুয়াশা নামে তন্দ্রার এবং ‍যদি বা ঘুম এসে থাকে দুর্দৈব সে ঘুম মনে নয়-দেহ; তার জেগে রয়েছে চেনা নদীর ধারে।

সাধুরীতি: ফুটপাতে উহার সকলে এলাইয়া পড়িয়া রহিয়াছে। ছড়ানো খড় যেন। কিন্তু মধ্যাহ্নের দিকে লঙ্গরখানায় দুইটি খাইতে পাইয়াছিলো বলিয়া তবু তাহাদের নিদ্রা আসিয়াছে। মৃত্যুর মত নিঃসাড় নিশ্চল নিদ্রা। তবে আমুর চোখে নিদ্রা নাই, শুধু কখনও কখনও কুজ্বটিকা নামে তন্দ্রার এবং যদ্যপি নিদ্রা আসিয়া থাকে, সেই নিদ্রা মনে নয় দেহ; মন তাহার জাগিয়া রহিয়াছে চিনা নদীর ধারে।

আঞ্চলিক ভাষা বলতে কি বুঝ?

আঞ্চলিক ভাষা ও উপভাষা সমার্থক। ইংরেজি Dialect শব্দের পরিভাষিক শব্দ হচ্ছে আঞ্চলিক ভাষা বা উপভাষা। Dialect শব্দটি এসেছে গ্রিক ভাষা থেকে।
আঞ্চলিক-ভাষা-বলতে-কী-বোঝো
গ্রিক ভাষা থেকে শব্দটি প্রতম ল্যাটিন পরে ফরাসি ভাষায় আসে। তারপর ফরাসি থেকে ইংরেজিতে। গ্রিক ভাষায় শব্দটি অর্থ ছিল ‘কথ্য বলার প্রকৃতি’ প্রাচীন ইরেজিতে Dialect শব্দের অর্থ ছিল ‘কথা বলার ধরন।


আঞ্চলিক ভাষা বলতে সাধারণত বোঝায় অঞ্চল বিশেষের ভাষা। যেমন- বাংলা সংগ্র বাংলাদেশের মানুষর মূল ভাষা। কিন্তু বাংলাদেশের ভেতর রয়েছে চট্টগ্রাম, সিলেট, ঢাকা, বরিশাল, নোয়াখালি, যশোর, রংপুর, কুষ্টিয়া অঞ্চলে প্রচলিত বিশেষ ভাষা।

এ ভাষা বাংলা ভাষা থেকে আলাদা নয়- কিন্তু তাদেরও ও স্বতন্ত্র পরিচয় রয়েছে। এই পার্থক্য প্রধানত শব্দের উচ্চারণগত, ক্ষেত্রবিশেষ কিছু শব্দের পৃথক ব্যবহার গত। তাই আমরা বলে পরি যে, কোন ভাষার এলাকার মধ্যে বিশেষ অঞ্চলের মানুষ যে ভাষায় কথা বলে তাকেই বলে আঞ্চলিক ভাষা বা উপভাষা।

লেখকের মন্তব্য - চলিত ভাষা কাকে বলে এর বৈশিষ্ট্য

আমরা এতক্ষন আলোচনা করলাম চলিত ভাষা কাকে বলে এর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে এবং আঞ্চলিক ভাষা বলতে কী বুঝ এছাড়াও সাধুভাষা থেকে চলিত ভাষায় রুপান্তর এবং চলিত ভাষারীতি থেকে সাধুভাষা রীতিতে রুপান্তর ইত্যাদি বিষয়। তবে এই বিষয়ে যদি আপনার কোন মন্তব্য থাকে নিচের মন্তব্য করুন।

এছাড়াও আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে সব ধরনের তথ্য আমরা আমাদের এই ওয়েবসাইটে আপলোড করে থাকি আরো যদি বিস্তারিত দেখতে চান তাহলে আমাদের ইউটিউব চ্যানেল এবং ফেসবুক পেজ (ইভিভিটিভি) ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ইভিভিটিভি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়;

comment url