ব্যাংক কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি - ব্যাংকের প্রকারভেদ জানুন
ব্যাংক কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি এবং ব্যাংকের প্রকারভেদ সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। ব্যাংক কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি এই বিষয়গুলো আপনাদের জানা প্রয়োজন। আমরা আলোচনা করব ব্যাংক কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি এবং ব্যাংকের প্রকারভেদ সম্পর্কে।

আপনি যদি শিক্ষার্থী হন অথবা জানতে চান ব্যাংক কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি এবং ব্যাংকের প্রকারভেদ তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন।
ইভিভিটিভি
ব্যাংক
ব্যাংক এমন একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান যা একদিকে জনসাধারণের সঞ্চয়িত অর্থ জমা রাখে অন্যদিকে জনগণ্য ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে প্রয়োজনে ঋণ প্রদান করে। তাই ব্যাংক মূলত ঋণের কারবারি। তবে বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ ব্যাংকের বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেছেন।
আরো পড়ুন: রূপলী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম
অধ্যাপক ক্রাউথার বলেন “ব্যাংক তার নিজের ও অন্য লোকের ঋণের কারবার করে।”
অর্থনীতিবিদ সেয়ার্স বলেন “ব্যাংক হল এমন একটা প্রতিষ্ঠান যার ঋণ অন্যান্য লোকের পড়া পরস্পরের ঋণ পরিশোধ করার জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।”
কেয়ারনক্রস বলেন “ব্যাংক হল আর্থিক মধ্যস্থতাকারী-ধার ও ঋণের কারবারি।”
অধ্যাপক কুলবর্ণ বলেন “ব্যাংক হল এমন এক ধরনের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান যা টাকা-পয়সা নিরাপদে রাখে এবং ঋণদান ও ঋণ হস্তান্তরের কাজ করে থাকে”।
ব্যাংকে কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি
ব্যাংক এমন একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান যা মূলত জনসাধারণের উদ্বৃত্ত অর্থ আমানত হিসেবে গ্রহণ করে এবং ব্যবসায়ী ও অন্যদেরকে ঋণ প্রদান করে। সুতরাং ব্যাংক মূলত ঋণের কারবারই প্রতিষ্ঠান। ব্যাংক সাধারণত বিভিন্ন কাজের উপর ভিত্তি করে হয়ে থাকে বর্তমানে ব্যাংক মূলত ১০ প্রকার। যেমন:
- কেন্দ্রীয় ব্যাংক
- বাণিজ্যিক ব্যাংক
- বিনিময় ব্যাংক
- শিল্প ব্যাংক
- কৃষি ব্যাংক
- সমবায় ব্যাংক
- বন্ধ কি ব্যাংক
- সঞ্চয়ী ব্যাংক
- ইসলামী ব্যাংক
- আন্তর্জাতিক ব্যাংক প্রভৃতি
ব্যাংকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায় যথা প্রথমটি চেইন ব্যাংক এবং দ্বিতীয়টি গ্রুপ ব্যাংকিং। গঠন অনুযায়ী আবার ব্যাংকে দুই ভাগে ভাগ করা যায় যথা একক ব্যাংকিং এবং দ্বিতীয়টি শাখা ব্যাংকিং।
ব্যাংকের প্রকারভেদ - ব্যাংকে কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি

বর্তমান যুগ বিশেষীকরণের যুগ। ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান প্রভৃতি সব ক্ষেত্রেই বিশেষীকরণ নীতি প্রয়োগ করা হচ্ছে। ব্যাংক ব্যবসায়ের ক্ষেত্রেও নীতি অবলম্বন করা হচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্য স্বল্প মেয়াদী ঋণ প্রদান, বৈদেশিক বাণিজ্য অর্থ সরবরাহ, দীর্ঘকালীন বিনিয়োগ প্রভৃতি বিভিন্ন কার্য একই প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করা সম্ভবপর হয় না।
এজন্য বিশেষ বিশেষ কার্যের জন্য বিভিন্ন প্রকার ব্যাংক গড়ে উঠেছে। কাজের প্রভৃতি অনুসারে ব্যাংকে নিম্নলিখিত কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়, যথা- (১) কেন্দ্রীয় ব্যাংক, (২) বাণিজ্যিক ব্যাংক, (৩) বিনিময় ব্যাংক, (৪) শিল্প ব্যাংক (৫) কৃষি ব্যাংক, (৬) সমবায় ব্যাংক, (৭) বন্ধকী ব্যাংক, (৮) সঞ্চয়ী ব্যাংক, (৯) ইসলামী ব্যাংক, (১০) আন্তর্জাতিক ব্যাংক প্রকৃতি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক
পৃথিবীর প্রায় প্রত্যেক দেশেই একটা করে ব্যাংকের আছে। তা দেশের অন্যান্য সমস্ত ব্যাংকের কেন্দ্রস্থল হিসেবে কাজ করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের সমগ্র ব্যাংক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে এবং দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখে। তা অন্যান্য ব্যাংকের ব্যাংকার হিসাবে এবং ঋণদানের শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করে। যেমন, বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হল বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাণিজ্যিক ব্যাংক
যেসব ব্যাংক ব্যবসা-বাণিজ্য স্বল্পমেয়াদি ঋণ প্রদান করে তাদিগকে বাণিজ্যিক ব্যাংক বলা হয়। জনসাধারণের নিকট হতে আমানত গ্রহণ এবং তাদিগকে স্বল্প মেয়াদি ঋণ প্রদান করায় বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান কাজ। যেমন, বাংলাদেশের সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, পূর্বালী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, আরব বাংলাদেশ ব্যাংক প্রভৃতি কয়েকটি বাণিজ্যিক ব্যাংক রয়েছে।
বিনিময় ব্যাংক
যেসব ব্যাংক বৈদেশিক বাণিজ্যের টাকা লেনদেন করে তাদিগকে বিনিময় ব্যাংক বলা হয়। বৈদেশিক বাণিজ্যের টাকা লেনদেন করে বৈদেশিক বাণিজ্য ব্যবস্থা সুগম করায় এ ব্যাংকের প্রধান কাজ। এটা বৈদেশিক মুদ্রা ও বিল ক্রয় বিক্রয় করে। বিশ্বের প্রতিটি দেশে বিনিময় ব্যাংক রয়েছে। বাংলাদেশে অবস্থিত চার্টার্ড ব্যাংক, ন্যাশনাল এ্যাগু গ্রীন্ড লেজ ব্যাংক. ব্যাংক অভ চায়না প্রভৃতি বিনিময় ব্যাংক।
শিল্প ব্যাংক
এ জাতীয় ব্যাংক শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দিয়ে থাকে। ইউকো ব্যাংক দেশ কে শিল্পায়িত করতে যথেষ্ট সাহায্য করে। যেমন, বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক, বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থা, শিল্প ও পুজি বিনিয়োগ সংস্থা প্রভৃতি বিভিন্ন শিল্প ব্যাংক রয়েছে।
কৃষি ব্যাংক
এ জাতীয় ব্যাংকের প্রধান উদ্দেশ্য হল কৃষি কাজে ঋণদান করা। কৃষি কাজে স্বল্প মেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী উভয় প্রকার ঋণী প্রয়োজন হয়। কৃষিকার্যে বীজ, তার প্রগতি করার জন্য স্বল্প মেয়াদী ঋণ গ্রহণ করে এবং জমির স্থায়ী উন্নতি বিধানের জন্য ও মূল্যবান যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ঋণ গ্রহণ করে এবং জমির স্থায়ী উন্নতি বিধানের জন্য ও মূল্যবান যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য দীর্ঘমেয়াদী ঋণ গ্রহণ করে। কৃষকদের এ উভয় প্রকার ঋনদানের জন্য কৃষি ব্যাংকের সৃষ্টি হয়েছে।
বন্ধকী ব্যাংক
বন্ধকী ব্যাংকে জমির বন্ধক রেখে দীর্ঘকালীন ঋণ প্রদান করে। এসব ব্যাংক প্রধানত কৃষি কাজেই ঋণ প্রদান করে থাকে।
সমবায় ব্যাংক
পারস্পরিক সহায়তার স্বল্প সুদের ঋণ প্রদান করাই সব সমবায় ব্যাংকের উদ্দেশ্য। এরা প্রধান দরিদ্র কৃষক ও ক্ষুদ্র শিল্পপতিদেরকে ঋণ প্রদান করে থাকে।
সঞ্চয়ী ব্যাংক
সঞ্চয় ব্যাংকের প্রধান কাজ হল জনসাধারণের নিকট হতে আমানত গ্রহণ করা। এটা সাধারণত উচ্চ হাড়ে সুদ প্রদান করে জনসাধারণকে ভবিষ্যতের জন্য অর্থ সঞ্চয় করতে উৎসাহ প্রদান করে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই ধরনের সঞ্চয়ী ব্যাংক রয়েছে। বাংলাদেশের পোস্টাল সেভিংস ব্যাংক মূলতঃ সঞ্চয় ব্যাংক হিসেবে কাজ করে।
ইসলামী ব্যাংক
সম্প্রতি পৃথিবীর বিভিন্ন মুসলিম দেশে সুদবিহীন ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ১৯৭৫ সালে ইসলামী সম্মেলনে সংস্থা কর্তৃক জেদ্দায় ‘ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠিত করা হয়। এ ছাড়া, বিভিন্ন মুসলিম দেশে ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যেমন, সুদানের ‘ফয়সাল ইসলামী ব্যাংক; বাহরাইন ইসলামী ব্যাংক, জর্ডান ইসলামী ব্যাংক প্রভৃতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ইসলামী ব্যাংকের মূল উদ্দেশ্য হলো ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক বাংলাদেশ লিঃ নামে দেশের প্রথম সুদ মুক্ত ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক ব্যাংক
জাতিসংঘ বা অন্য কোন আঞ্চলিক সংস্থা কর্তৃক আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের সহায়তা করার উদ্দেশ্য প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকগুলোকে আন্তর্জাতিক ব্যাংক বলা হয়। যেমন- বিশ্ব ব্যাংক, আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (I. M. F), এশীয়া উন্নয়ন ব্যাংক (A. D. B) প্রকৃতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বিশ্বের অনুন্নত দেশসমূহের অর্থনৈতিক শিল্পকলা বাস্তবায়নে সাহায্য ও সহযোগিতা করাই হলো এইসব আন্তর্জাতিক ব্যাংকের মূল লক্ষ্য।
আরো পড়ুন : সোনালী ব্যাংক ম্যানেজার এর বেতন কত
গঠন প্রকৃতি অনুযায়ী ব্যাংক আরও দুই ভাগে ভাগ করা যায়; যথা- (১) ইউনিট ব্যাংক ও (২) শাখা ব্যাংকিং
- একক ব্যাংকিং : এই ব্যবস্থাকে আমেরিকান ব্যাংক ব্যবস্থা বলা যেতে পারে।কারণ, আমেরিকার অধিকাংশ ব্যাংকেই ইউনিট ব্যাংক। এ ব্যবস্থায় সাধারণত কোন ব্যাংকের শাখা অফিস থাকে না। দু’ একটা অফিস থাকলেও তা শহরে অবস্থিত।
অর্থাৎ এই ব্যবসায়ী বিভিন্ন ব্যাংকের কার্যাবলী নির্দিষ্ট একটা স্থানের সময় সীমাবদ্ধ থাকে। এজন্য একে আঞ্চলীককৃত ব্যাংক বলা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যাংক আছে এবং তারা প্রত্যেক নিজ নিজ এলাকায় স্বাধীনভাবে ব্যাংক ব্যবসায়ী চালিয়ে থাকে। - শাখা ব্যাংকিং : এ ব্যবস্থায় একটা ব্যাংকের অসংখ্য শাখা অফিস থাকে এবং এগুলো দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করা হয়। এই শাখা গুলো নিজেরাও স্বাধীনভাবে ব্যবসায় করতে পারে না। তাদিগকে প্রধান অফিসের নির্দেশ অনুযায়ী ব্যবসায় পরিচালনা করতে হয়। এ ব্যবস্থাকে ব্রিটিশ ব্যাংক ব্যবস্থা বলা হয়।
কারণ, সমগ্র গ্রেটব্রিটেন পাঁচটি বৃহৎ ব্যাংক; যথা- বার্কলে, লয়েড্স, মিডল্যান্ড, ন্যাশনাল, প্রভিন্সিয়াল এবং ওয়েস্টমিনিষ্টার এবং তাদের অসংখ্য শাখা-প্রশাখার সাহায্যে ব্যাংক ব্যবসায় পরিচালনা করা হয়। ইংল্যান্ড ছাড়া কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও ফ্রান্স, ভারত প্রকৃতির দেশে শাখা ব্যাংকিং ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে।
বাংলাদেশের ব্যাংকে ব্যবস্থা ও ব্রিটিশ ব্যাংক ব্যবস্থার ভিত্তিতে গঠিত। ব্রিটিশ ব্যবস্থার মতো বাংলাদেশের সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, পূর্বালী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক প্রভৃতি কয়েকটি ব্যাংক এবং তাদের অসংখ্য শাখা প্রশাখার সাহায্যে ব্যবসায় পরিচালনা করা হয়।
ব্যাংকে আবার দুভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
চেইন ব্যাংক : নিজস্ব স্বাধীন সত্তা বজায় রেখে যখন কতগুলো স্বতন্ত্র ব্যাংক বিশেষ পদ্ধতিতে একত্রিত হয়ে একটি সাধারণ ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হয় এবং একক নিয়ন্ত্রণাধীনে পরিচালিত হয় তাকে চেঞ্জ ব্যাংক বলে।
গ্রুপ ব্যাংকিং : যখন একাধিক ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান একটি হোল্ডিং কোম্পানির অধীনে নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হয় তখন তাকে গ্রুপ ব্যাংকিং ব্যবস্থা বলে। সাধারণত একটি বৃহৎ ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের কতগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যাংকের শেয়ার নিজের মালিকানায় গ্রহণ করে এই জাতীয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়।
লেখকের মন্তব্য
ব্যাংক কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি এবং ব্যাংকের প্রকারভেদ সম্পর্কে আপনারা সম্পূর্ণ তথ্য জেনেছেন। এবং কোন ব্যাংকের কাজ কি সেই ব্যাংকের বিস্তারিত আমরা আলোচনা করেছি। তবে আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার মনে কোন প্রশ্ন জাগে তাহলে নিচে মন্তব্য করুন অপশন রয়েছে। সেখানে ক্লিক করে আপনারা আপনাদের মনের কথাগুলো জানাতে পারেন। এরকম গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে আমাদের ইভিভিটিভি ওয়েবসাইট ইউটিউব চ্যানেল ফেসবুক পেজ প্রতিদিন অনুসরণ করুন।
ইভিভিটিভি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়;
comment url