মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা কি হালাল ইসলামিক দৃষ্টিকোণ
বর্তমান বিশ্বে অন্যতমনের ব্যবসা গুলোর মধ্যে আরেকটি ব্যবসা হল মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা। তবে অনেক মুসলিম ভাই-বোনেরা রয়েছেন যারা মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা শুরু করতে চান কিন্তু অনেক বিধায় পড়েছেন যে তারা ব্যবসাটি শুরু করবে কিনা। তারা জানতে চান ইসলামিক শরীয়ত অনুযায়ী মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা কি হালাল ইসলামিক দৃষ্টিকোণে বিস্তারিত।
আপনি যদি মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা করতে চান হালালভাবে তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার পড়া উচিত। এ আর্টিকেলে আমরা কোরআন হাদিস এবং ইসলামিক স্কলারদের আলোকে বিষয়টি আলোচনা করব।
মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা কি হালাল ইসলামিক দৃষ্টিকোণ
মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা কি হালাল ইসলামিক দৃষ্টিকোণ
সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা গুলোর মধ্যে মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা অন্যতম। কিন্তু অনেক মুসলিম ভাই বোনেরা রয়েছেন যারা মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসার কথা ভেবেছেন। কিন্তু এই ব্যবসা শুরু করার আগে একজন মুসলিম হিসেবে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো-ইসলামী শরীয়তে মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা কি হালাল ইসলামিক দৃষ্টিকোণ?
ইসলাম ব্যবসাকে হালাল বলেছেন তবে এক্ষেত্রে কিছু শর্ত রয়েছে। যেমন কোন ব্যবসার মধ্যে যদি সুদ প্রতারণা ইতালি থাকে তাহলে সেটি হারাম। তাই মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা কি হালাল ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে নাকি হারাম সেটি ভালোভাবে বুঝতে হলে মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা কে হালাল করার শর্ত গুলো কি কি সেগুলো জানতে হবে। মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা হালাল হওয়ার শর্তগুলো নিচে দেওয়া হল।
- তাৎক্ষণিক টাকা / মুদ্রা প্রদান : কেউ যখন মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা করবে লেনদেনের সময় দেরি না করে সাথে সাথে টাকা/মুদ্রা প্রদান করতে হবে। এক কথায় টাকার হাতবদল সাথে সাথে হতে হবে।
আরো পড়ুন : বিটকয়েন কি - বিটকয়েন কিভাবে কাজ করে
- টাকার বিনিময়ে টাকা: যখন কেউ টাকা এক্সচেঞ্জ করতে আসবে তখন টাকার বদলে তাকে টাকা দিতে হবে কিন্তু এক্ষেত্রে কোন ধরনের সুদ নেওয়া যাবে না। ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী সুদ নেওয়া সম্পূর্ণ হারাম। কোন ব্যবসায়ী যদি সুদ লেনদেন থাকে তাহলে সেই ব্যবসাটি সম্পন্ন হারাম। যখন কেউ আপনাকে ডলার দিবে তখন আপনি তাকে সরাসরি তাৎক্ষণিকভাবে কোন প্রকারের শুধু না নিয়ে বাংলাদেশি টাকা দিন।
- জালিয়াতি বা প্রতারণা না করা: যখন আপনি মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা করবেন তখন কখনোই আপনি আপনার গ্রাহকদের কে বা আপনার কাস্টমারদেরকে ঠকাবেন না। যখন যে ডলারের বা যে টাকার রেট যেমন যাবে তাকে সেই রেটে অর্থ প্রদান করবেন। কারেন্সির রেড নিয়ে কার সঙ্গে প্রতারণা করবেন না। ইসলামে প্রতারণা সম্পূর্ণ নিষেধ। কেউ যদি প্রতারণা করে এই ব্যবসা পরিচালনা করেন তাহলে সে ব্যবসাটি হারাম হবে।
- সুষ্ঠ চুক্তি: আপনি যখন কারো সঙ্গে লেনদেন করবেন মানি এক্সচেঞ্জ করবেন তখন আপনি আপনার কাস্টমার বা গ্রাহকের সঙ্গে ক্লিয়ার এবং বৈধ যেটা সঠিক সেই চুক্তি করবেন। আপনি যদি আপনার গ্রাহক বা কাস্টমারকে ঠকানোর চেষ্টা করেন সে ক্ষেত্রে এই ব্যবসাটি সম্পূর্ণ হারাম হতে পারে। ইসলাম অনুযায়ী হালালভাবে ব্যবসা করতে হলে অবশ্যই স্পষ্ট চুক্তি করতে হবে।
- সরকারের অনুমতি দিতে হবে: হালালভাবে মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা করার জন্য আপনি যে দেশে থাকবেন সেই দেশের সরকারের অনুমতি নিবেন। আপনার দেশে যদি মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসাটি বৈধ হয় তাহলে সে আপনাকে মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা করার জন্য লাইসেন্স প্রদান করবেন। কেউ যদি অবৈধভাবে এই মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা করে থাকেন তাহলে সেটি ইসলাম শরীয়ত অনুযায়ী হারাম।
- জাল নোট পরিহার: হালাল ভাবে ব্যবসা করতে হলে জাল নোট কখনোই ব্যবহার করবেন না। কারণ ইসলামে জালিয়াতি বা প্রতারণা সম্পূর্ণ নিষেধ।
মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা সম্পর্কে ইসলাম কি বলে?
ইসলাম অনুযায়ী ব্যবসা হালাল তবে সেটি বৈধভাবে। মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা হালালভাবে করতে হলে আপনাকে ইসলামী শরিয়াহর নিয়ম মানতে হবে। মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায় সম্পূর্ণ হালাল যদি সেটা হয় ইসলামি নিয়ম অনুযায়ী। কুরআন ও হাদিসের নিয়ম অনুসারে হালাল ভাবে ব্যবস্থা করতে হলে হস্তগত লেনদেন করতে হবে। ইসলাম বলে মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা করতে হলে তাৎক্ষণিক লেনদেন করতে হবে হস্তগত লেনদেন করতে হবে এবং কারো সাথে প্রতারণা করা যাবে না।
মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা কখন হারাম হয়
আমরা উপরে যে সকল শর্তগুলো আপনাকে জানিয়েছি সে সকল শর্ত যদি আপনি না মানেন তাহলে এটি সম্পূর্ণ হারাম। মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা তখনই হারাম হবে যখন আপনি ব্যবসার মধ্যে প্রতারণা করবেন। এছাড়াও মানি এক্সচেঞ্জ করতে আপনি কিছু লাভ সেখান থেকে নিবেন যেটাকে সুদ বলা হয়। মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা হারাম হওয়ার কারণসমূহ নিজে দেওয়া হলো।
তাৎক্ষণিকভাবে অর্থ প্রদান না করা।
- হস্তগত লেনদেন না করা।
- মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসার জন্য লাইসেন্স না করা।
- মানি লন্ড্রিংয়ের এর সঙ্গে যুক্ত থাকা।
- মুদ্রার / টাকার সঠিক রেট না প্রদান করা।
মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা কি হালাল ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে উপরোক্ত পয়েন্ট গুলো অনুসরণ করলে হারাম হবে।
মানি এক্সচেঞ্জ ক্ষেত্রে ইসলামী স্কলারদের মতামত
বিশ্ববিখ্যাত ইসলামিক স্কলারদের মতে মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা হালাল যদি সেটা হয় ইসলামী শরীয় অনুযায়ী। তবে এর মধ্যে যদি প্রতারণা বা রিবা তকে তাহলে এটি সম্পূর্ণ হরাম। বিশ্ববিখ্যাত ইসলামিক স্কলার শায়খ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ মানি এক্সচেঞ্জ করার ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক হস্তগত ছাড়া মানি এক্সচেঞ্জ বৈধ নয়। এরকম আরো অনেক ইসলামিক স্কলার এ বিষয়ে মতামত জানিয়েছেন।
দারুল উলুম দেওবন্দ: অন্য দেশের টাকার বিনিময়ে আরেক দেশের টাকা প্রদান করা এটি সম্পূর্ণ বৈধ তবে এখানে যদি কোন প্রকার সুদ না থাকে।
আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়: ব্যবসা বৈধ বা হালাল হওয়ার জন্য ন্যায়নিষ্ঠ ও রিবা মুক্ত হতে হবে।
মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা কি?
মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা হল এক দেশের টাকা অন্য দেশের তাকাতে কনভার্ট করে কাউকে দেওয়া। এক কথায় এক দেশের টাকা অন্য দেশের টাকায় কেনা বেচা করা। এটি সাধারণত বাংলাদেশ ব্যাংক এক্সচেঞ্জ হাউজের মাধ্যমে হয়ে থাকে আবার অনেকেই এটি বৈধভাবেও করতে পারে তবে সরকারের লাইসেন্স নিতে হবে।
মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা করলে কি গুনাহ হবে?
এই প্রশ্নটির অনেক মুসলিমদের মনে এসে থাকে- মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা করলে কি গুনাহ হবে? ইসলামী শরীয়াহ অনুযায়ী ব্যবসা হালাল। আর ইসলাম অনুযায়ী গুনাহর নির্ভর করে কোন কাজের বৈধতা কোন কাজে নিষিদ্ধতার উপরে।
কেউ যদি ইসলামের ব্যবসা করার নিয়ম অনুযায়ী ব্যবসা করেন তাহলে এটি সম্পূর্ণ হালাল হবে। কিন্তু কেউ যদি ইসলামের ব্যবসা করার নিয়ম গুলো অনুসরণ না করে তাহলে সেটি গুনাহ হবে। যেমন কেউ যদি ব্যবসার মধ্যে জালিয়াতি বা প্রতারণা করে, জাল নোট ব্যবহার করে এবং যদি কেউ তাৎক্ষণিক লেনদেন না করে তাহলে গুনার পর্যায়ে পড়ে।
আরো পড়ুন: ফরেক্স ট্রেডিং কি বাংলাদেশে বৈধ
এক কথায় কেউ যদি ইসলামিক নিয়ম-কানুন অনুযায়ী ব্যবসা না করে তাহলে সেটি অবশ্যই গুনহা হবে। পক্ষান্তরে কেউ যদি ইসলামিক নিয়ম কানুন অনুসরণ করে ব্যবসা করেন তাহলে সেটি হালাল উপার্জন হবে।
ইসলামিক নিয়ম অনুযায়ী মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা করার নিয়ম?
ইসলামিক নিয়ম অনুযায়ী মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা করতে হলে কিছু শর্ত রয়েছে সে সকল শর্ত আপনাকে মেনে চলতে হবে। ইসলামিক নিয়ম অনুযায়ী মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা করার প্রথম নিয়ম হলো লেনদেনের সময় তৎক্ষণিক লেনদের করতে হবে। এই নিয়মকে “তাকাবুদ” নিয়ম বলে।
দ্বিতীয়ত ব্যবসা শুরু করার আগে অবশ্যই আপনাকে আপনি যে দেশে ব্যবসা করতে চান বা যে দেশে রয়েছেন সেই দেশের সরকারের থেকে আপনার ব্যবসার জন্য লাইসেন্স নিবেন। এবং আপনি আপনার ব্যবসা শত ভাবে করবেন কোন জালিয়াতি বা প্রতারণা করবেন না।
অন্যদেরকে সঠিক রেট প্রদান করবেন এবং যার টাকা প্রদান করবেন না। এছাড়াও আপনি যদি মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা সম্পর্কে আরো বেশি কিছু জানতে চান তাহলে আপনারা আশেপাশে অনেক ইসলামিক ব্যক্তি রয়েছেন যারা জ্ঞানী তাদের থেকে পরামর্শ নিন।
আমাদের মতামত - মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা কি হালাল ইসলামিক দৃষ্টিকোণ
মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা কি হালাল ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে নাকি হারাম ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা এতক্ষন আলোচনা করলাম। ব্যবসাকে হালাল করেছে সে ক্ষেত্রে ইসলামের নিয়ম অনুযায়ী যদি কেউ ব্যবসা করে তাহলে যেকোনো ব্যবসা হালাল হবে। তবে শুরু করার আগে আমরা উপরোক্ত মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা হালালের জন্য যে সকল নিয়ম দিয়েছি আপনার সেই সকল নিয়ম গুলো অনুসরণ করুন। এই আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার কেন প্রশ্ন থাকে তাহলে নিচের মন্তব্য করুন অপশন থেকে আপনার মূল্যবান মতামতটি।
ইভিভিটিভি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়;
comment url